এখন মহাসড়কে নেই চাঁদাবাজি কিংবা পুলিশি উৎপাত। তারপরও কৃষকের ২০-২৫ টাকার ফসল ক্রেতার হাতে পৌঁছাতে দাম ওঠে যায় একশ টাকার ওপরে। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা যেমন থাকেন লোকসানে, তেমনি সবজি কিনতে হিমশিম খান ক্রেতারা। কীভাবে হয় হাতবদল, আর কীভাবে বাড়ে সবজির দাম, তা জানতে কৃষকের ক্ষেত থেকে বাজার পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়েছে গণমাধ্যম।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া। নিভৃত এ পল্লির কৃষক আবুল হোসেন। চলতি মৌসুমে লাউ ফলিয়েছেন তিনি। মাথার ঘাম পায়ে মাড়িয়ে দীর্ঘ পরিচর্যা শেষে তার ক্ষেতে দেখা দেয় সাফল্যের ঝিলিক! তারপরও লোকসানে কেন পড়তে হয় তাকে? ক্ষেত থেকে কত দরে বিক্রি হচ্ছে এ ফসল -- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম কমবেশি যাই হোক, বিক্রি করতেই হয়। তবে ২০ থেকে ২৫ টাকার বেশি পাওয়া যায় না।
একই এলাকার আরেক কৃষক আবেদ আলী; চাষ করেছেন বেগুন, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়শ, পটোলসহ কয়েক প্রকারের সবজি। কিন্তু প্রতিবছরের মতো এবারও তার মুখে নেই স্বস্তির হাসি। তিনি বলেন, ‘বাজারে নিয়ে গেলে কমবেশি যাই হোক দিয়া আইতে হয় আমাগো। ব্যাপারীরা যা দাম দেয়, তাই দিয়া বেচতে হয়।’
আবুল হোসেন ও আবেদ আলীর মত অনেক কৃষককে স্থানীয় বাজারে দারস্থ হতে হয় পাইকারদের কাছে। এখানে প্রথম দফা দাম বাড়ে সবজির। ক্ষেতে যে লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকা ছিলো; দুই কিলোমিটার পথ যেতে না যেতেই দাম হয়ে যায় দ্বিগুণ। লাউয়ের মতো অন্যসব সবজিরও একই দশা।
এদিকে কৃষক পর্যায়ে বরবটির দাম কেজিতে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, ব্যাপারীর কাছে দাম বেড়ে হয়ে যায় ৬০ টাকা। কৃষক পর্যায়ে বেগুনের দাম কেজিতে ৩০ টাকা, ব্যাপারীর কাছে দাম বেড়ে হয়ে যায় ৪৫ টাকা। পটোলের কৃষক পর্যায়ে দাম ২৮ থেকে ৩০ টাকা, আর ব্যাপারীর কাছে ৪২ টাকা। করলার কৃষক পর্যায়ে দাম ৩৫ টাকা, ব্যাপারীর কাছে ৫০ টাকা। পেঁপের কৃষক পর্যায়ে দাম ১৪ থেকে ১৭ টাকা, আর ব্যাপারীর কাছে দাম বেড়ে হয়ে যায় ২০ থেকে ২৫ টাকা। চিচিঙ্গার কৃষক পর্যায়ে দাম ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, আর ব্যাপারীর কাছে ৪০ থেকে ৪৩ টাকা। ঢ্যাঁড়শের কৃষক পর্যায়ে দাম ৪৫ টাকা, আর ব্যাপারীর কাছে হয়ে যাচ্ছে ৬০ টাকা।
এসব সবজি স্থানীয় বাজারে কৃষকদের কাছ থেকে কিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা বিক্রির জন্য নিয়ে যান ব্যাপারীরা। কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে হাত বদল হয় কয়েক ধাপে। কৃষক থেকে যায় ব্যাপারীর কাছে, সেখান থেকে আড়ত, তারপর পাইকার এবং সবশেষে খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে যায় ভোক্তার হাতে। এর প্রতিটি ধাপেই বাড়তে থাকে দাম।